সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০২:৫৫ পূর্বাহ্ন
শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন দুই রোগীর শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর বরিশাল জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
তার ওপর ওই দুই রোগীর গ্রামের বাড়ি ও কর্মস্থলের ওপর বিশেষ নজরদারি জোরদার করেছে স্থানীয় প্রশাসন। যার মধ্যে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চরগোপালপুর ইউনিয়নের কাজিরপর গ্রামের বাসিন্দা আক্রান্ত হওয়ায় মুন্সি বাড়িসহ আশপাশের কয়েক বাড়ি মিলিয়ে এক কিলোমিটার এলাকাকে আলাদাভাবে লকডাউনের আওতায় এনেছে উপজেলা প্রশাসন।
এছাড়া অপর করোনা পজেটিভ ব্যক্তির কর্মস্থল জনতা ব্যাংকের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠি ইউনিয়ন শাখা, ডিজিটাল ক্লিনিক নামে একটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও ওই ব্যক্তির বাড়িসহ আটটি বাড়ি মিলিয়ে দশমিক পাঁচ কিলোমিটার এলাকা আলাদাভাবে লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাকেরগঞ্জের এ ব্যক্তি জনতা ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করতেন।
এদিকে লকডাউন ঘোষণার আগ থেকেই মেট্রোপলিটন ও জেলা পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নজরদারি ও কার্যক্রম জোরদার করায় বিগত কয়েকদিন ধরেই বরিশালে অঘোষিত লকডাউন চলছে। গত ৭ এপ্রিল থেকে বাইরের জেলা ও উপজেলা থেকে বরিশাল নগরে ঢোকা রোধে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মহাসড়কে চেকপোস্ট বসায় পুলিশ। একইভাবে কয়েকদিন আগে থেকেই জেলার গেটওয়ে গৌরনদীতেও বাইরের জেলা ও উপজেলা থেকে ঢোকা রোধে খেয়া পারাপার বন্ধ করাসহ নজরদারি বাড়ায় প্রশাসন।
যদিও প্রশাসনিক এসব তৎপরতার ফাঁকেই প্রয়োজনের দোহাই দিয়ে অপ্রয়োজনে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে। তবে এবার আনুষ্ঠানিক লকডাউন ঘোষণার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আরও কঠোর হয়েছে। রোববার (১২ এপ্রিল) দিনগত রাত থেকেই মানুষকে নিজ ঘরে রাখতে এলাকাভিত্তিক টহল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া সোমবার সকাল থেকেই নগরের বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়কে চেকপোস্ট ও টহলের মাধ্যমে পুলিশ সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। নগর ও জেলার গেটওয়েগুলোতে নজরদারি বাড়িয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যতীত কোনো যানবাহন বরিশালে বিশেষ করে নগরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
এছাড়া গৌরনদী-কালকিনী (ভূরঘাটা) সীমানায় যৌথ টহলের ব্যবস্থাকরণসহ জিগজ্যাগ পদ্ধতির মাধ্যমে যানবাহন ঢোকা মনিটরিং করার পাশপাশি হেঁটে প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. খাইরুল আলম জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়াসহ জরুরি সেবার আওতায় থাকা পরিবহন ও ব্যক্তিদের বাইরে বরিশাল নগরে গত কয়েকদিন ধরেই কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। তেমনি এখান থেকে কেউ বাইরেও যেতে দেয়া হয়নি। আর পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। যা বাস্তবায়নে পুলিশের সদস্যরা সড়ক, মহাসড়কে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
তিনি আরো বলেন, প্রাণঘাতী মহামারির ভয়াবহ প্রকোপ থেকে নগরবাসীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী, পুলিশের আইজিপি ও বিএমপি কমিশনারের নির্দেশনা মোতাবেক বরিশাল মেট্রোপলিটন একাকায় কেউ ঢোকা ও বাইরে যেতে পারবে না।
খাইরুল আলম বলেন, নিজ নিজ অবস্থানে থেকে আমরা সবাই সচেতন হয়ে অপরকে সচেতন করে তুলতে পারলে মরণব্যাধি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ থেকে নিরাপদে থাকবো। আর করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নিতে সবাই ঘরে থাকুন। অযথা বিনা প্রয়োজনে কেউ ঘরের বাইরে বের হলে তাকে গ্রেফতারসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, হোম কোয়ারেন্টিন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য পুলিশ বাহিনী প্রথম থেকেই এখানে কাজ করছে। আর বরিশাল জেলা বিশেষ করে বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকা বিভাগের বাকী জেলাগুলোতে যাওয়ার গেটওয়ে। তাই আমরা এখানে বেশকিছু চেকপোস্ট বসিয়ে সম্পূর্ণভাবে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছি।